সিক্রেট

১.
নিলয় যেদিন প্রথম খুনটা যখন করেছিল – তখন ওর বয়স ছিল আট ।
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে কোনদিকে তাকানোরও জো নেই । চোখ জ্বলে যায় ।
গ্রামের মানুষ বলাবলি করছে, ‘আম পাকা গরম ।’
ওরা এমনই । অস্বস্তিকর একটা ব্যাপারের একটা না একটা পজিটিভ দিক খুঁজে বের করবেই ।
ভাদ্রের কুকুর পাগল করা গরমে এরাই হাসিমুখে বলবে, ‘তাল পাকছে । তাল পাকা গরম ।’
মানে কষ্ট করার পর ভালো কিছু পাওয়ার আশা এদের থাকবেই !




আমবাগানের নিচে বসে বসে নখ কাটছিল নিলয় দাঁত দিয়ে । হাতে একটা ছোট আম ।
আমটা কাঁচা । একটু আগে পেড়ে এনেছে ও ঢিল মেরে ।
একই হাতে আমটার সাথে একটা আম কাটার ছুরিও ধরে ছিল ও । একটু ঘামটা নামলে আমটা কেটে খেয়ে
বাসাতে যাবে । সাত দিন পর বৃত্তি পরীক্ষা । এই সময় বাসার বাইরে ওকে আধ ঘন্টার বেশি দেখলে বাবা বেতিয়ে একেবারে সিধে করে দেবেন ।
শিশু নিলয়ের মাথাতে আম খাওয়া ছাড়া আর কিছু ছিল না ।
ঠিক সেই সময়েই আমবাগানের উত্তর পাশ দিয়ে আস্তে করে হেঁটে আসতে দেখা গেল মানুষটাকে ।
সুন্নতী লেবাস পড়নে – মাথাতে টুপির বদলে একেবারে পাগড়ি । সাদা পায়জামা আর সাদা পাঞ্জাবীতে নূরানী চেহারাটা বেশ মানিয়েছে । ইনাকে নিঃসন্দেহে কোট-টাইয়ে মানাত না ।
গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব । ইনার কাছে নিলয় মক্তবে পড়ে ।
আলিফ-বা-তা এর গন্ডি পেরিয়ে আমপারা ধরেছে ।
হুজুরের হাতে একটা টাটকা ইলিশ মাছ । এই মাত্র বাজার থেকে আসছেন সম্ভবত ।
অথবা কোন ভক্ত বা শাগরেদ হয়ত উপহার দিয়েছেন ।
হুজুরকে নিলয় যথেষ্টের চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা করে । বাবার থেকেও বেশি ।
মদ্যপ্য বাবার জ্বালায় বাসাতে টেকা দায় । মায়ের সাথে খুনসুটি লেগেই আছে ।
আর অশ্রাব্য গালিগালাজ ।
বাবাটা একটু অদ্ভুত । সব দিকে তাল-লয়হীন এই বাবা দুনিয়াতে একমাত্র নিলয়কেই ভালবাসে ।
নিলয়ের দিকে মাতাল চোখেও কি দারুন ভাবে খেয়াল রাখে সেটা নিলয় জানে । ওর ভালো রেজাল্টের পেছনে এই কড়া গাইডেন্স গুরুত্ব রাখে ঠিকই – কিন্তু শ্রদ্ধা জিনিসটা বাবার জন্য আসে না নিলয়ের ।
সস্তা তালের রসের মদ খাওয়া গ্রাম্য একজন জমিদার বংশের ছেলের জন্য আর কি-ই বা শ্রদ্ধা আসবে ?
হুজুর কাছে আসতেই নিলয়কে দেখতে পেলেন ।
নিলয় অবশ্য মাছ দেখছে ।
হাতের ইলিশ মাছটা এখনও নড়ছে তির তির করে ।
‘কেমন আছ, বাপ ? গরমে ছায়ায় দাঁড়ায় আছ ?’ পান খেয়ে লাল করা দাঁতগুলো বের করে স্নেহভরা কন্ঠে জানতে চাইলেন হুজুর ।
‘আস সালামু আলাইকুম, হুজুর ।’ হাত থেকে আমটা ফেলে দিয়ে বলে নিলয় ।
‘ওয়া আলাইকুম আআআআ-হ’
লাফিয়ে সামনে এসে হুজুরের পেটে ছুরিটা পুরোটা ঢুকিয়ে দেয় নিলয় । তারপর জোরে টেনে নিয়ে আসে বুকের দিকে ।
টকটকে লাল রক্ত দেখার একটা আশা ছিল ওর মনে । কিন্তু সফেদ পাঞ্জাবী ছিঁড়ে পেটের বিশাল ক্ষতটা দেখা গেলেও – কোন রক্তের চিহ্ন পায় না নিলয় একটা মুহুর্ত ।
চমৎকারভাবে সাজানো গোছানো হুজুরের নাড়িভুড়িটা দেখতে পায় ও স্পষ্টভাবে ।
এত কাছ থেকে যেটা দেখার সৌভাগ্য হয় নি ওর ।
তারপরই ফোকড় পেয়ে নিখুঁত ভাবে পেটের গহ্বরে বসানো নাড়িভুড়িগুলো বের হয়ে আসে বাইরে ।
আর্তচিৎকারের বিরাম নেই – হুজুর দুই হাতে ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টা করছেন ওগুলো – তারপরই সব লাল হয়ে আসে ।
রক্তের ধারা বিভিন্ন দিক থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে ।
আতংকে পাগল হয়ে যান হুজুর । দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না আর ।
হাঁটু গেড়ে পড়ে যান মাটিতে ।
খেয়ালই করেন না লাফিয়ে এগিয়ে আসছে মৃত্যুদূত !
নিলয়ের ছুরিটা এবার হুজুরের গলাটা সুন্দর করে দু টুকরো করে দেয় ।
ঘরঘরে একটা শব্দ করে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেন সদ্য জবাই হয়ে যাওয়া হুজুর ।
পা দুটো ব্যর্থই ছুড়েন মাটিতে ।
আর আস্তে করে সরে আসে নিলয় । কাছেই পরিত্যক্ত পুকুরটাতে কয়েকবার ডুব দিয়ে রক্তের দাগগুলো ধুয়ে ফেলে বাসার দিকে যখন ও হাঁটা দেয় – মনের ভেতর অনাবিল একটা শান্তি অনুভব করে ও প্রথমবারের মত ।
হুজুরের একমাত্র জীবিত আত্মীয় ছোটভাই রহমতুল্লাহকে পুলিশ পরের দিন কোমড়ে দড়ি বেঁধে থানাতে নিয়ে যায় ।
খবরটা শুনে নিলয়ের ঠোঁটের কোনে একটুকরো হাসি ফোটা ছাড়া আর কোন ভাবান্তর হয় না ।
২.
দ্বিতীয় খুনটা করে নিলয় ক্লাস নাইনে থাকতে ।
প্রথম খুনটার পেছনে কোন মোটিভ ছিল না । হুজুরকে একাকী এগিয়ে আসতে দেখে ওর কি হয়েছিল নিলয় নিজেও জানে না ।
শুধু জানে ওই মুহূর্তে ওকে ছুরিটা হুজুরের পেটে ঢুকিয়ে দিতে হত । আর কোন কিছু ওর মাথাতে কাজ করে নি ।
কিন্তু দ্বিতীয় খুনটার পেছনে মোটিভ ছিল ।
গ্রাম ছেড়ে মফস্বল শহরে চলে এসেছে ক্লাস সিক্সেই ।
ওদের সেকশনের প্রীতির প্রেমে পড়ে যায় নিলয় ।
মেয়েটা মাথা খারাপ করা সুন্দরী । এত চিকণ, মনে হয় বাতাসে পড়ে যাবে !
তবে এজন্যই ওকে সুন্দর লাগে আরও বেশি ।
প্রথম প্রেম । কাজেই নিলয় সাহস করে বলে উঠতে পারে না তার অনুভূতির কথা ।
তবে প্রীতির ছায়া হয়ে যায় ও ।
প্রীতি কেমিস্ট্রি রহিম স্যারের কাছে পড়তে যায় ? নিলয়ও সেখানে যাবে ।
ফিজিক্স পড়ে ও সেলিম স্যারের কাছে ? নিলয়ও এখানেই যাবে ।
ম্যাথের জন্য প্রীতি পিক করেছে হাবীব স্যারকে ? নিলয়েরও ওখানেই প্রাইভেট পড়া লাগবে ।
প্রীতির চারপাশে ঘুর ঘুর করতে থাকতে থাকতেই ব্যাপারটা চোখে পড়ে ওর ।
সরফরাজ ভাই মাঝে মাঝে প্রীতিকে এগিয়ে দেয় কেন স্যারদের বাসা পর্যন্ত ? স্কুলের গেটের বাইরে সরফরাজ ভাই কেন দাঁড়িয়ে থাকেন ?
ছেলেটাকে ও ভালোভাবেই চেনে । প্রীতির খালাত ভাই । কিন্তু কোনদিন কোন খালাত ভাই তার বোনের পিছে পিছে এভাবে পায়রার মত ঘুরে ?
শালা নির্ঘাত প্রেম চালাচ্ছে প্রীতির সাথে !
নিলয় মাত্র নাইনে পড়ে আর সরফরাজ ভাই ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ।
তার অর্থ এই না যে নিলয় কিছুই বোঝে না ।
কাজেই ওকে মাথা খাটাতে হয় এবার ।
গ্রামের নির্জন আমবাগান এখানে নেই । মফস্বল শহরে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে খুন করে ফেলাটা এত সহজ কাজ না ।
তবে নিলয়ের একটা সুবিধে আছে ।
খুন করার প্ল্যান করতে ওর কোন বাড়তি উত্তেজনা হয় না । ঠান্ডা মাথাতে চিন্তা করতে পারে ।
আগে একটা খুন করে আসলে পরেরগুলোর জন্য আর আলগা ভীতি কাজ করে না ।
নিলয় একেবারে নতুন নয় এই লাইনে ।
তবে স্বাভাবিক সতর্কতা রাখতে তো হবেই ।
মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ডাকা যাবে না সরফরাজ ভাইকে । যদিও ডাকলেই তিনি আসবেন । নিলয়কে চেনেন তিনি ।
কিন্তু কল লিস্ট বা অপারেটর আর্কাইভসে থেকে যাওয়া রেকর্ডিংস পরে ওকে ফাঁসিয়ে দেবে নির্ঘাত ।
বাজারের মাঝে ক্যারাম খেলার জন্য সরফরাজ ভাই মাঝে মাঝেই যান । ওখান থেকে ফেরার সময় ইচ্ছে করেই তাঁর সামনে পড়ে যায় নিলয় ।
‘আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া ।’ উজ্জ্বল মুখে বলে নিলয় ।
‘আরে নিলয় যে !’ হাসিটি ফিরিয়ে দেন সরফরাজ ভাই, ‘কি খবর ? কেমন চলছে সব ?’
হারামজাদার হাসি দেখে নিলয়ের শরীরের প্রতিটা কোষ জ্বলে যেতে থাকে তীব্র ঘৃণাতে । ব্যাটার সুখ লেগেছে ।
প্রাণের আনন্দে হাসছে । কুশল জিজ্ঞাসা করছে ।
আবার এই শালাই নিলয়ের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে ! হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে আসে ওর ।
‘ভাইয়া, একটা সমস্যা ।’ শেষে বলেই ফেলে নিলয় ।
‘কি হয়েছে ?’ উদ্বেগ নিয়ে জানতে চান সরফরাজ ভাই ।
‘আমার কম্পিউটার তো স্টার্ট নেয় না । আপনার হেল্প লাগত মনে হয় ।’ মাথা নিচু করে বলে নিলয়, যেন কতই না সংকোচের সাথে সাহায্য চাচ্ছে !
‘ওহ – এইটা ? কোন ব্যাপার না । আমি কালকে বিকালে আসব তোমার ওখানে । ঠিক আছে ?’
মাথা দুলিয়ে সায় দেয় নিলয় ।
সারা দুপুর চিলেকোঠার নিঃসঙ্গ রুমটায় অপেক্ষা করে নিলয় ।
বহুদিন পর শিকারের গন্ধে নিজেকে একটা ক্ষুধার্ত বাঘের মতই লাগে ওর ।
বাসাটা মামার ।
মায়ের ওখান থেকে এখানে এসেছে ক্লাস ফাইভের বৃত্তির রেজাল্টের পর পরই । গ্রামের মাঝে থেকেই ডিভিশনে ফার্স্ট নিলয় ।
আর তখনই প্রথমবারের মত মামীকে নিয়ে বেড়াতে আসেন মামা ।
মদ্যপ্য বাবার অবস্থা দেখে মামী স্রেফ আঁৎকে উঠেছিলেন ।
‘এই মাতালের ঘরে রত্ন কিভাবে আসল – কে জানে !’ মামার সাথে আড়ালে তর্ক করার সময় বলেন তিনি, ‘কিন্তু একে আমি নিয়ে যাব । অযথা এখানে নষ্ট করা যাবে না এই ছেলেকে ।’
নিয়ে এসে ঘরের মাঝেই আশ্রয় দিয়েছিলেন ঠিকই । কিন্তু ঘরে নিলয়কে রাখা গেল না মামাতো বোনটার জন্য ।
শেফালী ।
দেখতে শুনতে চমৎকার । কিন্তু মাথাটি এর ঠিক নেই ।
সোজা বাংলাতে পাগলী ।
বুদ্ধিমত্তা ওর বাড়ে নি বয়েসের সাথে ।
নিলয়কে প্রথম থেকেই ওর পছন্দ না ।
যত দিন যায় নিলয়কে ওর অসহ্য থেকে অসহ্য লাগতে থাকে ।
শেষে কাচের প্লেট মেরে নিলয়ের মাথা ক্লাস সেভেনে থাকতে একবার ফাটায় শেফালী । তারপর থেকেই এই ব্যবস্থা ।
নিলয়কে পাঠিয়ে দেওয়া হল চিলেকোঠাতে ।
খাওয়ার সময় শুধু নেমে আসে ও । মামা-মামী যথেষ্ট ভালো মানুষ । দিনে একবার হলেও ওর খোঁজ নিতে আসেন ।
তবে বিকেলের দিকে তাঁরা কখনই আসেন না ।
৫টাতে মামা অফিস থেকে ফিরে আসলে মামীও তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন । কারও এদিকে খেয়াল থাকার কথাও না ।
ধীরে ধীরে এগিয়ে যেয়ে ছাদের রেইলিংয়ে দাঁড়ায় ও ।
নীচে কংক্রীটের স্লাবগুলোকে এখান থেকে দেখতে বিস্কুটের টুকরোর মত লাগছে । পাশের ড্রেনটা থেকে উপচে ওঠা ময়লা দেখতে নিলয়ের ভালই লাগে ।
টাইমিংটা পারফেক্ট । স্ল্যাব বসানোর কথা আগামীকাল সকালেই !
৩.
‘চমৎকার ভিউ ।’ পেছন থেকে সরফরাজের কন্ঠ শুনে একটুও কাঁপে না নিলয় ; ওর নার্ভ ইস্পাতের মত ঠান্ডা এবং কঠিন ।
ঘুরে দাঁড়ায় ও হাসিমুখে, ‘ভাইয়া চলে এসেছেন ?’
ওর পাশে এসে দাঁড়ায় সরফরাজ, রেইলিংয়ে হাত রেখে দূরে তাকিয়ে থাকে, ‘আসলাম । দারুণ বাতাস এখানে । তোমার তো ভালোই মজা ।’
কিছু না বলে নিলয় মাথা নাড়ায় একটু ।
সরফরাজ ভাই ওর থেকে ডাবল সাইজে । একে ম্যানেজ করাটা এত সহজ হবে না ।
উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে গেলে ওকেই ছাদ থেকে ড্রেনে ছুঁড়ে দেবে ভাই ।
‘চল, তোমার পিসির অবস্থা দেখি ।’ অবশেষে সরফরাজ ভাই নিজে থেকেই আগ্রহ দেখালেন ।
‘চলেন ।’ তাঁকে ভেতরের দিকে নিয়ে আসে নিলয় ।
সরফরাজ ভাই ভ্রু কুঁচকে আছেন ।
পিসি অনই করা যাচ্ছে না । হাতে করে আনা অপারেটিং সিস্টেমের ডিস্কগুলোকে এখন কাজের কিছু বলে মনে হয় না তাঁর কাছে ।
মনে মনে হাসে নিলয়, র‍্যাম খুলে রেখে দিয়েছে । কিছুক্ষণ ওদিক নিয়ে ভাবুক ব্যাটা ।
ডিস্ট্র্যাকশন !
‘আলো আসছে । পেছনের দরজাটা বন্ধ কর তো ।’ বিরক্ত হয়ে বলেন সরফরাজ ভাই ।
আর দশজন পিসি অ্যাডিক্টের মতই মনিটরে উজ্জ্বল আলোর রিফ্লেকশন সহ্য করতে পারেন না তিনি । জানালা দরজা বন্ধ করে রুম অন্ধকার করে রাখা পাবলিকদের একজন ।
খুশি হয়ে ওঠে নিলয়ও । পিসি টেবিলটা ওভাবেই সরিয়েছে ও আজ সকালেই ।
সরফরাজ ভাইয়ের কাছ থেকে আদেশ নিয়েই দরজা বন্ধ করা সুবিধেজনক । সন্দেহ করার কিছুই থাকবে না উনার ।
দরজা লাগিয়ে ফিরে এসেছে নিলয়, ওর দিকে তাকান সরফরাজ ভাই, ‘সিপিইউ খোলা লাগবে । একটা স্ক্রু-ড্রাইভার দিতে পারবে ? তোমার মান্ধাতা আমলে জিনিস । ইদানিংকারের গুলো হাত দিয়েই খোলা যায় ।’
নিলয় কিছু না বলে একটা স্ক্রু ড্রাইভার এগিয়ে দেয় ।
মান্ধাতা আমলের জিনিস এটা না । তবে হাত দিয়ে খোলার মত স্ক্রুগুলো সরিয়ে ও নিজেই স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে খোলার মত স্ক্রু লাগিয়েছে । এগুলো সব সকালের কাজ ।
শালার সরফরাজ !
প্রীতির দিকে চোখ দেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিল না একটু ?
সিপিইউ কাভার ধরার সাথে সাথে পেছন থেকে সকেটের সাথে ঝোলানো তারদুটো নিয়ে সরফরাজ ভাইয়ের গায়ে ঠেকিয়ে দেয় নিলয় ।
সিপিইউ পড়ে থাকল ।
সরফরাজ ভাই চিৎ হয়ে গেছেন ।
চেঁচামেচির অবস্থা নেই । হাই ভোল্টেজ শক খেয়ে বাঁকা হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় ।
এই ফাঁকে তির তির করে কাঁপতে থাকা সরফরাজ ভাইয়ের হাত পা বেঁধে ফেলে নিলয় ।
মুখটাও চমৎকার ভাবে কেটে রাখা এক টুকরো কাপড় দিয়ে শক্ত করে বাঁধে ।
তারপর পড়ার টেবিল থেকে ওর কাঁটা কম্পাসটা তুলে নেয় একহাতে ।
দিস উইল বি ফান !
বাম হাতের নখের সামান্য ওপর থেকে ঝাঁঝরা করতে শুরু করে নিলয় ।
ডানহাতটা ওর পিস্টনের মত উঠছে নামছে – আর সেলাই মেশিনের মত ফুটো ফুটো হয়ে যেতে থাকে সরফরাজ ভাইয়ের হাত ।
কনুই পর্যন্ত আসতেই জ্ঞান ফিরে আসে তাঁর – তীব্র যন্ত্রণাতে লাফিয়ে উঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন তিনি ।
নিলয়ের চোখে মুখে পৈশাচিক একটা আনন্দ খেলা করে সেটা দেখে ।
ভারী খাটের পায়ার সাথে এক হাত আর আরেক পা বাঁধা আছে । শত চেষ্টাতেও নড়ার কোন সম্ভাবনা নেই এই মানুষের ।
অন্য পা আর হাতটা আছে মেঝে থেকে রডের সাথে বাঁধা । হাতি আটকে রাখার মত করে আটকে রাখা হয়েছে ওকে ।
কোন সম্ভাবনাই নেই এর থেকে মুক্তির ।
কম্পাসের কাঁটার আঘাতে শিকার ব্যাথা পায় ঠিকই – কিন্তু রক্ত সেভাবে বের হয় না ।
বিন্দু বিন্দু রক্তের দিকে তাকিয়ে থাকে নিলয় ।
বিষয়টা ওর কাছে বেশ মজার লাগে । আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে সরফরাজের হাল্কা গোঙ্গানীর শব্দটা সেরকম মধুর লাগছে এই মুহূর্তে ।
প্রায় আধ ঘন্টা সারা শরীর ঘুরে ঘুরে কম্পাস দিয়ে ফুটো করার পর সকালে কেটে রাখা দারুণ কাপড়ের টুকরোটা হাতে নেয় ও ।
কয়েক স্তরের কাপড়টা দেখতে অনেকটা কুকুরের গলাতে আটকানোর বেল্টের মত । যদিও নিলয় এটা বানিয়েছে পুরোনো বিছানার চাদর থেকে ।
বেল্টটার ঠিক মাঝখানে একটা সরু ফুটো ।
আস্তে করে ওটা সরফরাজ ভাইয়ের গলাতে পড়িয়ে দেয় নিলয় ।
চকচকে মেলামাইনের বাটিটা নিয়ে ফিরে আসে আবার । সকালে মামী ওকে এতে করেই মুড়ি মাখিয়ে দিয়েছিলেন ।
সরফরাজ ভাইয়ের কন্ঠার হাড়ের ওপর বেল্টের ফুটো অংশটা রেখেছে ও – ওদিক দিয়ে খুব কষ্ট করে একটা পেন্সিল ঢোকানো যাবে হয়ত ।
তবে নিলয় পেন্সিল ঢোকায় না ।
কম্পাসটা রেখে হাতে তুলে নেয় স্ক্রু-ড্রাইভারটি ।
গলাটে টাইট করে বেল্টটা বাঁধা আছে কি না খেয়াল করে আরেকবার ।
সরফরাজ ভাইয়ের চোখে যন্ত্রণার পাশে এই মুহূর্তে ফুটে উঠেছে মৃত্যুভয় । সেদিকে তাকিয়ে নির্মল একটা হাসিতে ভরে ওঠে নিলয়ের মুখটা ।
ভাইয়ের চুল মুঠো করে ধরে চট করে স্ক্রু ড্রাইভারটা বেল্টের ফুটো দিয়ে পুরোটা ঢুকিয়ে দেয় নিলয় ।
তারপরই ওটা বের করে এনেই একটু ঘুরিয়ে দেয় গলার বেল্টটা ।
ক্ষতটা ঢাকা পড়ে গেল কাপড়ের থাকের আড়ালে ।
রক্তের ছড়াছড়ি থাকবে পুরো রুম জুরে – তাহলেই আর দেখতে হত না । কাজেই একটু আঙুল বাঁকা করতেই হল আর কি ।
চুল ধরেই রাখে নিলয় । ঘাড়ের পেছনে আস্তে করে রাখে মেলামাইনের বাটিটা ।
গলার সামনে থেকেই তীব্র বেগে রক্ত বের হচ্ছে – কিন্তু বাইরে বের হতে পারছে না ।
মধ্যাকর্ষণের অমোঘ টানে বেল্ট বেয়ে ঘাড়ের পেছন দিয়ে টপাটপ পড়তে থাকা রক্তগুলো কালেক্ট করে নিলয় মেলামাইনের বাটিটায় ।
জানালায় কারও ছায়া এসে পড়ে এই সময় ।
মুখ তুলেই চমকে ওঠে নিলয় ।
শেফালী !
*
চোখ মেলতেই নিলয় বুঝতে পারে – আটটা বেজে গেছে ।
আজও অফিসে দেরী হবে সন্দেহ নেই ।
তবে কোম্পানীর ষাট শতাংশ মালিকানা তার থাকাতে এটা কোন সমস্যা নয় ।
মাথা ঝাঁকিয়ে একটু আগে দেখা বাজে স্বপ্নটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে ও ।
আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পায় পাশে আধবসা হয়ে থাকা তিয়ানার দিকে । টিশার্ট আর হাফ প্যান্টে অসাধারণ লাগছে ওকে ।
বাম হাতে সিগারেট ধরে থাকাটাই শুধু ওর অসাধারণ লাগে না ।
‘ছেড়ে দেবে বলেছিলে ।’ বিড় বিড় করে নিলয় ।
অ্যাশট্রেতে সিগারেটটা গুঁজে দিয়ে ফিরে তাকায় তিয়ানাও, ‘গুড মর্নিং ।’
মেয়েটার ঝলমলে হাসি দেখে নিলয়ের গাম্ভীর্যতা খসে যায় । এর মাঝে কি যেন আছে ।
এই যে বার বার সিগারেটটা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে আবার ধরে – তবুও রাগতে পারে না ও ।
তিয়ানার চুমুটা নিয়ে বাথরুমের দিকে এগোয় নিলয় ।
আজকে এমনিতেও অফিস যাবে না ও । তবে গার্লফ্রেন্ডকে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না ।
ফর্মাল ড্রেসে যখন বের হয় নিলয় – তিয়ানা বেড়িয়ে গেছে ।
দেরী করার জন্য ফাইন গুণতে হবে হয়ত আজ ওকে ।
পকেট থেকে কার্ডটা বের করে নিলয় । গতকাল চমৎকার দেখতে এই মানুষটার সাথে দেখা হয়ে গেছিল বারে ।
একেবারে অপ্রত্যাশিত পরিচয়টা নিলয়ের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ ছিল ।
কোম্পানির দুই দুটো সিদ্ধান্ত নিয়ে টেনশনে ছিল ও – প্রতিটিরই একটি সহজ সমাধান বাতলে দিয়েছেন মানুষটা ।
পরবর্তীতে পরিচয় দিয়ে জানিয়েছেন তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ।
ঠান্ডা মাথার মানুষটিকে ভালো না লাগার কোন কারণ নেই ।
আজ শুধু দেখা করার জন্যই ওদিকে যাচ্ছে না নিলয় । মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য ওর দরকার ।
বিশেষ দরকার ।
৪.
‘তৃতীয় খুনটা করলেন শেফালীকে ?’ থুতনীতে হাত ঠেকিয়ে জানতে চাইলেন গৌরব সাহা ।
একটা মুহূর্ত তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে নিলয় ।
‘বলেছেন, শেফালীর প্রতি আপনার আকর্ষণ ছিল । শুধুই দৈহিক । সরফরাজের মার্ডারের সাক্ষী ও – কাজেই তাকে সরিয়ে দিয়েছেন, এমনটা ভাবার কারণ নেই । কারণ মানসিক বিকারগ্রস্থ একজনের কথা কেউ বিশ্বাস করত না । সরফরাজকে চিনতও না ও । কাজেই আপনার খুনের মোটিভটা কি ছিল সেখানে ?’
‘জানি না ।’ মাথা নাড়ে নিলয়, ‘এজন্যই আপনার সাহায্য দরকার আমার ।’
‘চতুর্থ খুনটা ব্যাপারে আসা যাক – প্রীতিকে নির্জন গলিতে গলা টিপে হত্যা করেন আপনি । সরফরাজকে সরিয়ে ফেলার পর আপনার রাস্তা ক্লিয়ার ছিল । খুনটার মোটিভ নেই ।’
মাথা নাড়ে নিলয় ।
গৌরব সাহা সাপের মত ধূর্ত লোক । দেশের বিজনেস টাইকুনদের অন্যতম নিলয়ের পিছে তাঁর লাগার দুঃসাহস থাকার কথা না । আর লাগতে এলে তাকে সরিয়ে দেওয়া যাবে অনায়াসে ।
রিস্ক নেয় নি নিলয় । মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে মাইক্রোফোন লুকানো থাকতে পারে – কাজেই একটা রেস্টুরেন্টের প্রাইভেট কেবিনে এনেছে ও তাকে ।
ওর একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দরকার । আর কিছু না ।
‘পরের খুনটা করেন কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে । তুশির প্রেমে পড়েছিলেন । মেয়েটা আপনার প্রতি উইকও ছিল । তাকে খুন করার পেছনেও কোন মোটিভ নেই ।’ হাতের নোটপ্যাডের দিকে তাকান ডক্টর, ‘তারপর খুন করেন বেস্ট ফ্রেন্ড অনীককে ।’
‘আই নো !’ টেবিলে দড়াম করে ঘুষি মারে নিলয়, ‘আঠারো বছর বয়েসে আমি সতেরটা খুন করি । একটা বাদে কোনটার মোটিভ নেই ।’
‘কিন্তু তারপর তো থেমে যান, তাই না ?’ সরু চোখে তাকান ডক্টর গৌরব ।
মাথা নীচু করে নিলয়, ‘থেমে যাই আমি । কিন্তু আমার দুঃস্বপ্নের শুরু ওখানেই ।’
‘আপনার খুন করা চরিত্রগুলোকে দেখতে পান আপনি স্বপ্নে । তারা আপনার পদ্ধতিতেই আপনাকে হত্যা করে । এই সময় ঘুম ভাঙ্গে আপনার । তাই না ?’ কোমল গলাতে জানতে চান গৌরব সাহা ।
‘এক্স্যক্টলি !’ আবার টেবিলে ঘুষি মারে নিলয়, ‘টানা দশ বছর ধরে আমি এই দুঃস্বপ্ন দেখে এসেছি, ডক্টর । ডু সামথিং ! আমি এর থেকে মুক্তি চাই ।’
সামনের কফির কাপে একটা হাল্কা চুমুক দেন ডক্টর । তারপর মাথা তোলেন, ‘আমার ব্যাখ্যা শুনতে চান ?’
দ্রুত মাথা নাড়ে নিলয় ।
‘আপনার অবচেতন মন ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির । ভালোবাসার মানুষটিকে ধ্বংস করে ফেলার প্রবণতা আছে ওটার । গ্রামের হুজুরকে শ্রদ্ধা করতেন আপনি । কাজেই হামলা চালালেন তাঁর ওপর । একটা খুন করে ফেলার পর প্রতিশোধপরায়ন আপনি সহজেই প্রতিশোধ নিলেন সরফরাজের ওপর । শেফালীর সাথে আপনার শারীরিক সম্পর্ক ছিল । কাজেই কোন একদিন মেরে ফেললেন মেয়েটাকেও । ভালোবাসতেন প্রীতিকে । সরিয়ে দিলেন তাকে । ক্রাশ খেলেন তুশির ওপর । তাকেও মেরে ফেললেন – বেস্ট ফ্রেন্ড অনীক – গার্লফ্রেন্ড ঋতু, চায়ের দোকানদার মাহফুজ – যিনি আপনাকে স্নেহ করতেই অত্যাধিক – নিজেই বলেছেন – এভাবে প্রতিটা খুন করেছেন ভালো লাগার মানুষদের ।’
গৌরবের দিকে তাকিয়ে থাকে নিলয়, লোকটা ভুল কিছু বলেনি ।
‘কাজেই -’ বলে চলেছেন গৌরব, ‘আপনার অবচেতন মন নিজেকে শাস্তি দেওয়ার একটা উপায় বের করল । নিজেও হয়ত জানেন না – কিন্তু আপনি অনুতপ্ত । ভীষণ অনুতপ্ত প্রতিটি মার্ডারের জন্য । নিজেকে শাস্তি দিতে শুরু করলেন একটা একটা দুঃস্বপ্নের মাধ্যমে । আপনার অবচেতন মন চাইছিল যাদের খুন করেছেন তারা ফিরে এসে প্রতিশোধ নিক আপনার ওপর । আপনি দায়মুক্তি চাচ্ছিলেন মার্ডারগুলো থেকে । কিন্তু পাচ্ছিলেন না । কাজেই স্বপ্নে ফিরে আসে ওরা । আপনাকে আপনার মেথডেই খুন করতে থাকে ।’
‘এ থেকে মুক্তির কি কোন উপায় নেই ?’ নিলয়ের গলাটা এবার ভেঙ্গে আসে ।
‘অতীতকে চাপা দিতে হবে । অতীতের যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে ততদিন – যতদিন না আপনি নিজেকে সেখান থেকে বের করে বর্তমান জীবনে ফিরে আসতে পারেন ।’
‘অতীতকে চাপা দেব কিভাবে ?’ বিস্ফোরিত চোখে জানতে চায় নিলয় ।
‘সমাধানটা সহজ ।’ মৃদু হাসলেন গৌরব সাহা, ‘বিয়ে করে ফেলুন । গার্লফ্রেন্ডকে তিনমাস ধরে ঝুলিয়ে রেখেছেন বললেন না ? এবার বিয়েটা সেরে ফেলুন । নিজের একটা ছেলে বা মেয়ে হয়ে গেলে অতীতের ভূত মাথা থেকে নেমে যায় । অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই পরীক্ষিত ।’
ভয়ার্ত চোখে এখনও চেয়ে আছে নিলয় – খেয়াল করে ডক্টর একটা প্রশ্নবোধকদৃষ্টি দিলেন ।
‘ভালোবাসার মানুষদের সরিয়ে দেই আমি । তিয়ানা কি নিরাপদ ?’ বিড় বিড় করে জানতে চায় ও ।
নিলয়ের চোখের দিকে চোখ পড়তে চমকে ওঠেন গৌরব সাহা ।
ধিকিধিকি জ্বলছে চোখের তারা দুটো ।
যুগপৎ ঘৃণা আর জীঘাংসা সেখানে ।
*
সারা দিন পাগলের মত গাড়ি হাঁকিয়েছে নিলয় ।
এখানে থেকে সেখানে ।
তারপর থেমে একটা জুয়েলারীর দোকানে নেমে চটজলদি ডায়মন্ডের এংগেজমেন্ট রিংটা কিনে আবার গাড়িতে এসে বসেছে ।
রাত নেমে আসার আগ পর্যন্ত পাগলা ড্রাইভিংয়েই মত্ত ছিল ও ।
এখনও বার বার ভেবে দেখছে গৌরব সাহার প্রতিটি কথা । বিয়ে করতে উপদেশ দিয়েছেন তিনি ওকে ।
আবার এটাও সত্য – ভালোবাসার মানুষটিকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আছে ওর ।
উভয় সংকটে পড়ে গেছে নিলয় । ছন্নছাড়া ড্রাইভ করে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করেও কোন লাভ হচ্ছে না তাই ।
আরেকবার গাড়ি থামায় ও ।
পাশের শপিং মলে ঢুকে পড়ে ।
আট ইঞ্চি ফলার কিচেন নাইফটা কিনে এনে গাড়িতে যখন ফিরে আসছিল নিলয় – স্নায়ুগুলো ঠান্ডা হয়ে গেছে ওর একেবারেই ।
ঠান্ডা মাথাতে সব ভাবতেও পারছে ।
বাসাতে তিয়ানা আছে । ওদিকে গাড়ি হাঁকায় এবার ও ।
ওকে এখন তিয়ানার কাছে যেতে হবে ।
বাম হাতে ছুরিটা একবার স্পর্শ করে নিলয় সাবধানে ।
_ পরিশিষ্ট _
ধীরে ধীরে নিজের ড্রেসিং টেবিলটা গুছাচ্ছে তিয়ানা ।
আয়নাতে নিজের মুখটা দেখে একবার হাল্কা হাসে ও তার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে ।
পেছনে খুট খাট শব্দ হচ্ছে । আমলে নেয় না ও ।
এই শব্দ নিলয় ছাড়া আর কে করবে ? বাসাতে আর কেউ তো নেই ।
হাতের এঙ্গেজমেন্ট রিংটার দিকে তাকিয়ে আনমনে হাসে তিয়ানা । নিলয় ওকে ভালোবাসে ।
সত্যিকারের ভালোবাসা ।
ভালোবাসে তিয়ানাও – অনুভব করেছে একটু আগে ।
আলতো করে গাড়ির চাবিটা তুলে নেয় মেয়েটা একহাতে ।
ঘর থেকে বের হয়ে এগিয়ে যায় মেইন গেটের দিকে । একটা হাল্কা ড্রাইভ করা দরকার ।
তারপর আবার ফিরে আসে আগের ঘরে । লাইট জ্বালিয়ে চলে যাওয়াটা ঠিক হবে না ।
লাইট নেভানোর আগে একবার তাকিয়ে দেখে মেঝেতে পড়ে থাকা নিলয়কে ।
পেট চিরে দুইভাগ হয়ে গেছে ছেলেটার ।
তিয়ানার শরীরে শিহরণ দিয়ে ওঠে – একটু আগেই মাংসের ভেতর দিয়ে ছুরি চালানোর অভিজ্ঞতাটা হাতের মাঝে পেয়েছে ও – আরও একবার ।
নিলয়কে ওর বাম হাতে রিংটা পড়িয়ে দিতে দেখে ওর কি হয়েছিল তিয়ানা নিজেও জানে না ।
শুধু জানে ওই মুহূর্তে ওকে ছুরিটা নিলয়ের পেটে ঢুকিয়ে দিতে হত । আর কোন কিছু ওর মাথাতে কাজ করে নি ।
লাইট নিভিয়ে নিজের গাড়িটায় উঠে বসে তিয়ানা ।
বাসাটা নিলয়ের ছিল । ফিংগারপ্রিন্ট সব সরিয়ে এসেছে ও নিজের ।
কেউ ওর দিকে আঙুল তুলতে পারবে না । ওদের রিলেশনের ব্যাপারটা ছিল সিক্রেট ।
‘আঠারো !’ ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে বিড় বিড় করে তিয়ানা, ‘আঠারোবারের মত প্রেমে পড়লাম আমি ।’
লেখাঃ KîshØr PåshÅ
Share on Google Plus

About Nahid

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment