আবার বই চুরি গেলো।
বেচারা সুজয় প্রচণ্ড কান্না করছে, কারণ বইটা তার বড় বোনের। সে বাসা থেকে না বলে এনেছিল রনিকে দিবে বলে। এসেম্বলি করে ক্লাস এ এসে ব্যাগ খুলে দেখে বই নেই।
বইটা ফেলুদার " সোনার কেল্লা " ।
এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো বই চুরি গেলো। প্রথম বইটা আমারই চুরি গিয়েছিলো, তিন গোয়েন্দার " ভয়ংকর অসহায় " । টিফিন পিরিয়ড এর পর ক্লাস এ এসে ব্যাগ খুলে দেখি নেই। পড়ে অনেক খুজেছি পাইনি।
বইটার দাম তেমন বেশি ছিলনা বলে ততটা মন খারাপ করি নি।
বেচারা সুজয় প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়েছে বুঝাই যাচ্ছে। ক্লাস এ তেমন মনোযোগ দিতে পারছেনা। মফিজ স্যারের ক্লাস এ বেদম মার খেলো। একই বলে মরার উপর খরার খা।
মফিজ স্যারের ক্লাস এ যারা উনার কাছে প্রাইভেট পড়ে না,তাদেরকে সবসময় এ কিছুটা সাবধানে থাকতে হই। তাদেরকেই উনি বারবার ব্লাক বোর্ড এ ডাকে তারপর কঠিন দেখে একটা অংক করতে দেই।
না পারলে জিজ্ঞেস করে, " কার কাছে অংক পরস ।" যদি বলা হই বাসার স্যারের কাছে তবে মার কিছুটা কম দেই কিন্তু যদি কোন কারনে স্কুলের অন্য স্যার এর নাম বলা হই তবে প্রচণ্ড বিপদ , তখন বেঞ্চ এর নিচে মাথা ঢুকাই পেটানো শুরু করে।
আজকে সুজয় কে ডেকেছিল অংক করে দিতে, বেচারা অঙ্কতো পারেই নি, স্যারের নাম জিজ্ঞেস করতেই কোন উত্তর দিচ্ছিলনা। স্যার বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকাই পেটালো।
সুজয় কাঁদছে তো কাঁদছেই । তাকে আমি , আশরাফ আর রনি প্রচণ্ড সান্ত্বনা দিতে থাকলাম। সুজয় ভয় পাচ্ছে বাসাই সে কি বলবে ?
রনি আমাকে আর আশরাফকে এক দিকে ডেকে নিয়ে বলল,
ঃ কাজটা কে করছে বলতো ?
ঃ আমিতো বুঝতেছিনা
ঃ একবার ধরতে পারলেই হই -রনি বলল
"যেভাবে হোক খুজে বের করতে হবে " আশরাফ বলল।
আমরা গোয়েন্দার গল্পের অনেক বড় ফ্যান। এই প্রথম সত্যিকারের একটা কেস পেয়ে তিন জনই প্রচণ্ড excited।
টিফিন পিরিয়ড এ তিন জন মিলে শহীদ মিনারের পিছনে বসলাম এই নিয়ে আলোচনা করতে। "
ঠিক হলো আমাদের মধ্য মনি হবে " রনি "
আমরা ক্লাস এর মধ্যে সম্ভাব্য কয়েকজনের লিস্ট করলাম। ঠিক করা হলো কালকে সন্দেহভাজনদের গতিবিধি লক্ষ করে লিস্টটা ফাইনাল করা হবে।
" মূল খেলা শুরু হবে কাল থেকে " আশরাফ বলল।
রনির কথা মতো স্কুল এ তাড়াতাড়ি চলে এলাম। এরই মধ্যে দেখছি রনি আর আশরাফ আগের থেকে মিটিং করা শুরু করে দিল ।
সন্দেহভাজনদের লিস্টটা মোটামুটি কিছুটা বড়,তাই রনির কথা মত ঠিক হলো সবার উপরে ভালো করে আজকের দিনটা লক্ষ করে লিস্টটা ছোট করা হবে।
সুজয়কে দেখছি আজকে কিছুটা ভালোই দেখাচ্ছে আগের দিন থেকে। আমি আর রনি একই বেঞ্চ এ বসলাম। আশরাফ বসলো রাসেল এর পাশে বসলো, এটা আমাদের প্ল্যান এর একটা অংশ। রাসেল ও লিস্ট এ আছে।
সারা ক্লাস এ ভালো করে মন দিতে পারলাম না , খালি এইদিক অইদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকলাম যদি কিছু পাওয়া যায়। আশরাফ দেখছি খুব গল্প করছে রাসেল এর সাথে।
টিফিন পিরিয়ড এ তিন জন মিলে আবারো মিটিং করলাম। আশরাফ জানালো সে সন্দেহজনক কোন কিছু দেখি নি।
এর পড়ে তিন চার দিন পেরিয়ে গেলো তেমন কিছু আর ঘটেনি । কিন্তু একদিন আরেক বই চুরি গেলো । বইটা ছিল কৌশিক এর। বইএর নাম "ফিনিক্স " জাফর ইকবাল এর।
কৌশিক টিফিন পিরিয়ড এ বই ব্যাগ এ রেখে বাইরে বেরিয়ে ছিলো ,এসে দেখে নেই। রনি ক্লাস ক্যাপ্টেনকে ডেকে বলল ক্লাস এর সবার ব্যাগ চেক করে দেখতে। সবারই ব্যাগ চেক করা হলো কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলো না।
সেইদিন ছুটির পড়ে আমরা তিন জন মিলে একটা বুদ্ধি করলাম ঠিক করা হলো , আমি একটা বই আনবো আর মোটামুটি সবাইকে দেখাবো , টিফিন পিরিয়ড এ বইটা রেখে বাইরে যাব কিন্তু তিন জনই তিন দিক থেকে ক্লাসের উপর লক্ষ রাখবো ।
পরের দিন আমি বই নিয়ে এলাম। মোটামুটি বলা যেতে পারে লোভনীয় একটা বই। টিনটিন এর " ক্যালকুলাসের কাণ্ড " । বইটা আমি আনতে চাইনি কিন্তু বাকি দুই জনই বলল এটাই আনতে।
প্ল্যান মতই সব কিছু করা হলো, আমি ক্লাস এর মধ্যে বইটা পরতে থাকলাম। প্ল্যান মতো বইটা রেখে আমি ক্লাসের বাইরে থকে লক্ষ রাখতে থাকলাম । প্রায় ১০ মিনিট ধরে বসে আছি কিন্তু সন্দেহজনক কোনো কিছু দেখা যাচ্ছেনা।
ক্লাস এ কেও নেই।
কিছুক্ষণ পড়ে দেখলাম আমার টেবিল এর একটু দূরে করে রাসেল দাড়িয়ে । আমার টেবিল এর পাশের টেবিল এ সে বসলো। ২-১ মিনিট বসে আমার ব্যাগ এর দিকে তাকিয়ে রইলো।
হঠাৎ ক্লাস এ কে জানি আসলো দেখে সে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো। না এর পড়ে আর তেমন কিছু দেখা গেলো না ।
তিন জনই আবার একত্রিত হলাম। আশরাফ বলল
ঃ আমারতো মনে হচ্ছে কাজটা রাসেল ই করছে
ঃ আমার ও তো তাই মনে হচ্ছে, আজ ভালো করে সুযোগ পাইনি দেখে কাজ সারতে পারে নি।
ঃ ভুল হয়েছে এই বই আনা উচিত হইনি, বইএর সাইজ অনেক বড়, চুরি করা অনেক কষ্ট হবে- রনি বলল।
ঃ রাসেল এর বাসা আমাদেরই পাড়াই, আজ থেকে আমি লক্ষ্য রাখবো ওর উপরে। - আশরাফ বলল।
ঠিক আছে, পারলে আজই একবার ওদের বাসা থেকে ঘুরে আই যদি কিছু দেখিস। আমাদের জানাবি - রনি বলল।
ঃতুই কি ওদের বাসাই তেমন যাস ? - আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ঃ "না তেমন একটা দরকার না পড়লে আমি যাই না - আশরাফ বলল।
পরের দিন আশরাফ জানালো সে রাসেল এর বাসাই গিয়ে ছিল। কিন্তু সন্দেহজনক তেমন কোন কিছু দেখে নি।
এখন সত্যি চিন্তার বিষয় দেখা দিল। মনে করে ছিলাম, চোর ধরে ফেলেছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাজটা অনেক শক্ত।
রনি পরবর্তী একটা প্ল্যান বানালো। সে বলল, ক্লাস এর মধ্যে যারা বই প্রেমিক তাদের মোটামুটি একটা লিস্ট করে ফেলা যাক। কারণ বোঝাই যাচ্ছে যে চোর, একজন বই প্রেমিক।
এই লিস্টটা করে দেখা গেলো, আগের থেকে সন্দেহভাজনদের সংখ্যা কমে আসছে। বুঝতে পারলাম ক্লাস এ বই পড়ুয়ার সংখ্যা আসলেই কম, তার উপরে আমরা তিন জন বাদ গেলাম।
দেখা গেলো মোট সংখ্যা এসে দাঁড়ালো ৮ জনে। আশার কথা হলো তার মধ্যে রাশেদ ও আছে।
চিন্তার বিষয় হলো এই লিস্ট এখন কমাবো কিভাবে।
ঃ আমার মনে হই আমরা শুধু রাশেদ এর উপর সন্দেহ না রেখে বাকিগুলার উপরও এখন ভালো করে লক্ষ্য রাখা হোক।- রনি বলল।
এরই মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গেলো, আর তেমন কোন ঘটনাই ঘটলো না। তার অবশ্যই কারণ ও আছে ,কারণ কেউ ক্লাস এ বই আনতে সাহস পাচ্ছেনা।
আমরা তিন জনই আশা ছেড়ে দিলাম। আমাদের মিটিংগুলাও কোথাই হারাই গেলো।
কিন্তু বই আবার চুরি গেলো। আর বইটা আমারই । শিরশেন্দুর "কাকাতুয়া রহস্য " ।
বইটা আমি এনেছিলাম আমার এক পাড়ার বন্ধু থেকে। মাত্র একদিনের জন্যে চেয়ে এনেছিলাম,সময় ছিলনা তাই ক্লাস এই বইটা শেষ করতে চেয়েছিলাম।
এবং বইটা আশ্চর্যজনকভাবে চুরি গেলো, কারণ আমি ক্লাস থেকে তেমন বাইরে যাইনি । শুধু কিছুক্ষনের জন্যে ক্লাস এর সামনের বারান্দায় বেরিয়ে ছিলাম।
বইটা হারিয়ে আমার মাথা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেলো আমি সোজাসুজি রাশেদ কে গিয়ে বললাম-
ঃ বইটা কোথাই লুকিয়েছিস ?
ঃ কি...!! আমি কেন তোর বই নিবো
ঃ তুই নাতো কে নিয়েছে এই বই? তুই কি ভাবছোস কেউ কিছু বুঝবেনা ?
ঃ আমি তোর বই নেই নি ।
এর পর আমাদের মধ্যে অনেক কথা কাটাকাটি হলো...পরে বাকিরা এসে কোনোভাবে ঝগড়াটাকে সামাল দিলো।
ঃতোর এই ভাবে সরাসরি ওকে বলা উচিত হয়নি - রনি বলল।
ঃ আরে ও ই নিয়েছে, আর নাতো কে নিবে? - আমি বললাম
ঃ তুই কি দেখছিস যে বইটা ও নিয়েছে? - আশরাফ বলল
ঃ না দেখিনি তাতে কি... ও ছাড়া আর কারো উপরেই আমার সন্দেহ পড়ে না ।
বইটা হারিয়ে সেইদিন আমার সত্যি মাথাটা অনেক খারাপ হয়ে গেলো । বাসায় এসে ভাবতে থাকলাম তখন ক্লাস এ আর কে কে এসেছিলো। ক্লাস এ আমি একাই ছিলাম, মাঝে আশরাফ এসেছিলো আমার সাথে কথা বলতে, এর পরে এসেছিলো সাজ্জাদ।
কৌশিকও এসেছিলো তাও আমার সাথে কথা বলতে,বইটা চেয়েছিল আমার কাছ থেকে। সুজয়ও এসেছিলো। ও মনে পড়ল, রাসেল ও এসেছিলো প্রথমের দিকে।
রাসেল এসেছিলো মনে পরে আমার ওর উপরে আবার সন্দেহ হতে শুরু করলো। কিন্তু কালকে ওর কথা শুনে মনে হলো ও আসলেই নির্দোষ ।
আর বাকি নামগুলার মধ্যে সন্দেহজনক রইলো শুধু সাজ্জাদ। ওকে আমি ভালো করে চিনি না ।
টিফিন পিরিয়ড এ আশরাফ আর রনিকে জিজ্ঞেস করলাম সাজ্জাদ এর কথা।
ঃ ছেলেটা কেমন রে?-জিজ্ঞেস করলাম
ঃ ওর বাসা আমাদের পাড়াই, কিন্তু ছেলেটা ভালোই, কখনো সেইরকম খারাপ কিছু করতে শুনি নি। আমার সাথে অনেকদিনের পরিচয়।
ঃ তোর কি ওর উপরে সন্দেহ হচ্ছে?- রনি জিজ্ঞেস করলো
ঃ তবুও আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওর উপরে চোখ রাখা দরকার ?- আমি বললাম
ঃ ঠিক আসে, আজ থেকে চোখ রাখবো। -রনি বলল
ঃ আমিও রাখবো- আশরাফ বলল।
ক্লাস এর সবাই এখন রাসেল কে সন্দেহের চোখে দেখছে। দেখলাম সেইরকম কেও ওর সাথে ভালো করে কথা বলছে না। কাল ওকে সবার সামনে না এই ভাবে না বললেও চলতো ।
পরদিন আশরাফ আমাদের বলল-
ঃ সাজ্জাদ এর তেমন কোন সন্দেহজনক চোখে পড়ি নি। ও টিফিন পিরিয়ড এ বাসাই যায় খালি এইটাই নতুন জানলাম। বাসাতো কাছেই?
ঃ তোর বাসা ওর বাসা থেকে কাছে না?- জিজ্ঞেস করলাম।
ঃ হুম কাছেই।
ঃ তো তুই বাসাই যাস না কেন? টিফিন পিরিয়ড এ?- রনি জিজ্ঞেস করলো।
ঃআরে ধুর বাসাই যেতে ভালো লাগে না। - আশরাফ বলল।
ঃ আমার মনে হই আর ভালো করে ওর উপরে চোখ রাখা দরকার। - আমি বললাম।
এর পড়ে যে ঘটনাটা ঘটলো তাতে সত্যিই সাজ্জাদ এর উপরে আমার সন্দেহ উঠে গেলো । কারণ এবার সাজ্জাদ এর বই ই চুরি গেলো। বইটা কাকাবাবুর " মিশরের রহস্য " ।
সে ভুল করে বইটা ব্যাগ এ রেখে টিফিন পিরিয়ড এ বাসাই গিয়েছিলো আর তাতেই চোর সাবাড় করে দিলো ।
সাজ্জাদ আমার কাছে এসে বললঃ
ঃ তুই ঠিক বলেছিস, এইটা শিউর রাসেল এর কাজ। ও আমার পাশের বেঞ্চ এই বসেছিল ।
ঃ তোর পাশের বেঞ্চ এ বসলো, তবুও বই ব্যাগ এ রেখে চলে গেলি কেন?- জিজ্ঞেস করলাম ওকে
ঃ চিন্তা করি নি, ও চুরি করার আবার সাহস পাবে আবার।
ঃ হারামযাদা আসলেই। - আমি বললাম।
সেইদিন সাজ্জাদ ক্লাস ক্যাপ্টেন এর অনুমতি নিয়ে রাসেল এর ব্যাগ চেক করলো, কিন্তু কিছু পাওয়া গেলো না।
এর পরে অনেকদিন কেটে গেলো, আর তেমন কোন কিছু ঘটলো না । শুধু আশরাফ জানালো সে নাকি একবার রাসেল কে দেখেছিলো অনেক গুলা বই নিয়ে বাসাই ঢুকতে ।
কে জানে হইতো ওগুলা আমদের ই চুরি যাওয়া বই।
কদিন ধরে আশরাফ স্কুল এ আসছেনা, সে নাকি অসুস্থ শুনলাম।
বই চুরিও আর হচ্ছেনা। আমরা কয়েকজন আবার বই আনতে শুরু করলাম।
একদিন ভারত আর পাকিস্তান এর খেলা শুরু হলো। ক্লাস এর অনেকেই খেলা দেখার জন্যে স্কুল পালালো।
আমিও পালালাম। কিন্তু রনি পালালো না। তার নাকি খেলা তেমন ভালো লাগে না।
কি মনে করে সেইদিন জানি সেইদিন আর বাসায় গেলাম না, স্কুল এর কাছেই আমার আরেক বন্ধুর বাসায় খেলা দেখতে চলে গেলাম।
খেলা কেন জানি তেমন জমলোনা। তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো। ঘড়ি দেখে বুঝলাম এখন স্কুল ছুটি হয়ে যাবে।
হঠাৎ মনে পড়ল রনি আজ আমার জন্যে একটা বই এনেছিল, ওইটা নিয়া আনা হয়নি।
আবার স্কুল এর দিকে হাটা দিলাম।
স্কুল এ ঢুকলাম , দেখলাম তেমন ছাত্র নেই কারণ আজ অনেকেই খেলা দেখার জন্যে স্কুল আসে নি, যা এসেছে তার বেশির ভাগ ই পালালো।
ক্লাস রুম এ এসে দেখলাম রনির ব্যাগ পরে আছে, কিন্তু ও নেই। সম্ভবত বাথরুম এ গেলো।
আমি কেন জানি ক্লাস এ আর না ঢুকে ক্লাস এর বাম পাশের এক দেয়াল এর দিকে দাড়িয়ে ক্লাস এর ভিতর তাকিয়ে রইলাম।
হঠাৎ দেখলাম, ক্লাস এ পরিচিত একজন ঢুকল , আর আরেকজন বাইরের দিকে দাড়িয়ে আছে।
ভিতরের জন খুব দ্রুত রনির ব্যাগ খুলে একটা বই বের করে , তার ব্যাগ এ নিল।
তারপর দুজনেই তাড়াতাড়ি পালালো।
তার এক মিনিট পরে রনি ক্লাস এ আসলে আমি তার হাত ধরে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে এলাম তারপর দুজনকেই একসাথে ধরলাম।
ঃ রাসেল তোর ব্যাগ থেকে বইটা বের কর- আমি বললাম
ঃ কি? ও আমার বই নিসে- রনি বলল।
ঃ ও একা নেই নি, ওর আরেকজন সঙ্গী হলো সাজ্জাদ।
ঃ বেয়াদপ, কুত্তার বাচ্চা - এই বলে রনি সাজ্জাদ এর কলার চেপে ধরে ওকে মারধর শুরু করলো।
ঃ তুই কাকে মারতেসস- সাজ্জাদ বলে উঠলো।
ঃ তুই আমাদের মেরে কি লাভ...তুই জানোস এই চুরির মেইন নায়ক কে?- সাজ্জাদ বলতে থাকলো
ঃ কে- আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ঃ তোরা কল্পনাও করতে পারবিনা কে?- রাসেল বলল।
ঃ তোদের প্রানের বন্ধু আশরাফ- সাজ্জাদ বলল।
ঃ ও আমদের যেই ভাবে বুদ্ধি দিয়েছে আমারা সেইভাবেই কাজ করেছি। আজ এই প্ল্যান ওর ছিলনা দেখেই আমরা ধরা খেলাম।- রাসেল বলল।
ঃ তোদের এই কথাগুলার প্রমান কি?- আমি বললাম।
ঃ প্রমান...তোরা যেইদিন তিন জন মিলে প্ল্যান করে ছিলি না যে চোরের জন্যে টোপ ফেলবি,সেইদিন আশরাফই এ আমাকে বলেছিলো তোর বেঞ্চ এর পাশে একটু ঘোরা ঘুরি করে আসতে।
আর ওর প্ল্যান মতো সব সন্দেহ আমার উপরি ফেলানো হয়েছিলো ,যাতে তোরা সাজ্জাদ এর উপর ঘুণাক্ষরে সন্দেহ করতে না পারিস কারণ বেশির ভাগ চুরি ই সাজ্জাদ নিজ হাতে করতো, তারপরই টিফিন পিরিয়ড এ বাসাই রেখে আসতো । -রাসেল বলল
ঃ কিন্তু তবুও তোরা আমার উপরে সন্দেহ করলি, এই কারনে আমি দেখালাম যে আমার বই ই চুরি গেলো।কিন্তু সেইদিন আমি কোন বই ই আনিনি। - সাজ্জাদ বলল।
ঃ আর তোর বইটা চুরির সময় আশরাফ ইচ্ছা করে তোকে ক্লাস এর বাইরে এনে তোর সাথে কথা বলে তোকে ব্যস্ত রাখলো, আর ওই ফাকে আমি আর সাজ্জাদ মিলে বইটা সরাই।
ঃ আশরাফ কেন এই কাজ করলো?- আমি জিজ্ঞেস করলাম
ঃ আমি কি জানি, ওকেই জিজ্ঞেস কর। ও তোদের ভালো বন্ধু ঠিক কিন্তু ও আমদেরও ভালো বন্ধু,তোদের সাথে ওর পরিচয় মাত্র দুই বছরের,আর আমরা অনেক বছর ধরেই একই পাড়াই থাকি- রাসেল বলল।
ঃ আমরা তিন জন মিলে চেয়েছিলাম একটা লাইব্রেরি বানাতে- সাজ্জাদ বলল।
ঃ শেষ মেশ তাহলেই মিসির আলির কাছেই ধরা খেলি - রনি বলল।
রনি আমার জন্যে যে বইটা এনেছিল সেটার নাম " বাঘবন্দি মিসির আলি "
এর পরে আশরাফ যখন সুস্থ হয়ে ক্লাস এ আসলো, আমি ওর সাথে কথা বলি নি। যা বলার রনিই বলেছিল। সে রনির কাছে অনেক ক্ষমা চাইলো।
আমার চুরি যাওয়া বইগুলা ফেরত দিবে বলে কথা দিলো,কিন্তু ক্লাস এর বাকিদের কে ওদের চুরির কথাটা না বলার অনুরোধ করলো অনেক।
রনি বেশ কিছুদিন ওর সাথে কথা বলি নি, এক মাস পরে রনি আবার ওর সাথে কথা বলা শুরু করলো।
আমি ওর অনুরোধ রেখেছিলাম, কাওকে ওর চুরির কথা বলি নি। কিন্তু পুরো স্কুল জীবনে ওর সাথে আর কথা বলি নি,
কারণ আমি ওকে কখনই ক্ষমা করতে পারিনি।
লেখকঃ আইনুল চৌধুরী
বেচারা সুজয় প্রচণ্ড কান্না করছে, কারণ বইটা তার বড় বোনের। সে বাসা থেকে না বলে এনেছিল রনিকে দিবে বলে। এসেম্বলি করে ক্লাস এ এসে ব্যাগ খুলে দেখে বই নেই।
বইটা ফেলুদার " সোনার কেল্লা " ।
এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো বই চুরি গেলো। প্রথম বইটা আমারই চুরি গিয়েছিলো, তিন গোয়েন্দার " ভয়ংকর অসহায় " । টিফিন পিরিয়ড এর পর ক্লাস এ এসে ব্যাগ খুলে দেখি নেই। পড়ে অনেক খুজেছি পাইনি।
বইটার দাম তেমন বেশি ছিলনা বলে ততটা মন খারাপ করি নি।
বেচারা সুজয় প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়েছে বুঝাই যাচ্ছে। ক্লাস এ তেমন মনোযোগ দিতে পারছেনা। মফিজ স্যারের ক্লাস এ বেদম মার খেলো। একই বলে মরার উপর খরার খা।
মফিজ স্যারের ক্লাস এ যারা উনার কাছে প্রাইভেট পড়ে না,তাদেরকে সবসময় এ কিছুটা সাবধানে থাকতে হই। তাদেরকেই উনি বারবার ব্লাক বোর্ড এ ডাকে তারপর কঠিন দেখে একটা অংক করতে দেই।
না পারলে জিজ্ঞেস করে, " কার কাছে অংক পরস ।" যদি বলা হই বাসার স্যারের কাছে তবে মার কিছুটা কম দেই কিন্তু যদি কোন কারনে স্কুলের অন্য স্যার এর নাম বলা হই তবে প্রচণ্ড বিপদ , তখন বেঞ্চ এর নিচে মাথা ঢুকাই পেটানো শুরু করে।
আজকে সুজয় কে ডেকেছিল অংক করে দিতে, বেচারা অঙ্কতো পারেই নি, স্যারের নাম জিজ্ঞেস করতেই কোন উত্তর দিচ্ছিলনা। স্যার বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকাই পেটালো।
সুজয় কাঁদছে তো কাঁদছেই । তাকে আমি , আশরাফ আর রনি প্রচণ্ড সান্ত্বনা দিতে থাকলাম। সুজয় ভয় পাচ্ছে বাসাই সে কি বলবে ?
রনি আমাকে আর আশরাফকে এক দিকে ডেকে নিয়ে বলল,
ঃ কাজটা কে করছে বলতো ?
ঃ আমিতো বুঝতেছিনা
ঃ একবার ধরতে পারলেই হই -রনি বলল
"যেভাবে হোক খুজে বের করতে হবে " আশরাফ বলল।
আমরা গোয়েন্দার গল্পের অনেক বড় ফ্যান। এই প্রথম সত্যিকারের একটা কেস পেয়ে তিন জনই প্রচণ্ড excited।
টিফিন পিরিয়ড এ তিন জন মিলে শহীদ মিনারের পিছনে বসলাম এই নিয়ে আলোচনা করতে। "
ঠিক হলো আমাদের মধ্য মনি হবে " রনি "
আমরা ক্লাস এর মধ্যে সম্ভাব্য কয়েকজনের লিস্ট করলাম। ঠিক করা হলো কালকে সন্দেহভাজনদের গতিবিধি লক্ষ করে লিস্টটা ফাইনাল করা হবে।
" মূল খেলা শুরু হবে কাল থেকে " আশরাফ বলল।
রনির কথা মতো স্কুল এ তাড়াতাড়ি চলে এলাম। এরই মধ্যে দেখছি রনি আর আশরাফ আগের থেকে মিটিং করা শুরু করে দিল ।
সন্দেহভাজনদের লিস্টটা মোটামুটি কিছুটা বড়,তাই রনির কথা মত ঠিক হলো সবার উপরে ভালো করে আজকের দিনটা লক্ষ করে লিস্টটা ছোট করা হবে।
সুজয়কে দেখছি আজকে কিছুটা ভালোই দেখাচ্ছে আগের দিন থেকে। আমি আর রনি একই বেঞ্চ এ বসলাম। আশরাফ বসলো রাসেল এর পাশে বসলো, এটা আমাদের প্ল্যান এর একটা অংশ। রাসেল ও লিস্ট এ আছে।
সারা ক্লাস এ ভালো করে মন দিতে পারলাম না , খালি এইদিক অইদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকলাম যদি কিছু পাওয়া যায়। আশরাফ দেখছি খুব গল্প করছে রাসেল এর সাথে।
টিফিন পিরিয়ড এ তিন জন মিলে আবারো মিটিং করলাম। আশরাফ জানালো সে সন্দেহজনক কোন কিছু দেখি নি।
এর পড়ে তিন চার দিন পেরিয়ে গেলো তেমন কিছু আর ঘটেনি । কিন্তু একদিন আরেক বই চুরি গেলো । বইটা ছিল কৌশিক এর। বইএর নাম "ফিনিক্স " জাফর ইকবাল এর।
কৌশিক টিফিন পিরিয়ড এ বই ব্যাগ এ রেখে বাইরে বেরিয়ে ছিলো ,এসে দেখে নেই। রনি ক্লাস ক্যাপ্টেনকে ডেকে বলল ক্লাস এর সবার ব্যাগ চেক করে দেখতে। সবারই ব্যাগ চেক করা হলো কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলো না।
সেইদিন ছুটির পড়ে আমরা তিন জন মিলে একটা বুদ্ধি করলাম ঠিক করা হলো , আমি একটা বই আনবো আর মোটামুটি সবাইকে দেখাবো , টিফিন পিরিয়ড এ বইটা রেখে বাইরে যাব কিন্তু তিন জনই তিন দিক থেকে ক্লাসের উপর লক্ষ রাখবো ।
পরের দিন আমি বই নিয়ে এলাম। মোটামুটি বলা যেতে পারে লোভনীয় একটা বই। টিনটিন এর " ক্যালকুলাসের কাণ্ড " । বইটা আমি আনতে চাইনি কিন্তু বাকি দুই জনই বলল এটাই আনতে।
প্ল্যান মতই সব কিছু করা হলো, আমি ক্লাস এর মধ্যে বইটা পরতে থাকলাম। প্ল্যান মতো বইটা রেখে আমি ক্লাসের বাইরে থকে লক্ষ রাখতে থাকলাম । প্রায় ১০ মিনিট ধরে বসে আছি কিন্তু সন্দেহজনক কোনো কিছু দেখা যাচ্ছেনা।
ক্লাস এ কেও নেই।
কিছুক্ষণ পড়ে দেখলাম আমার টেবিল এর একটু দূরে করে রাসেল দাড়িয়ে । আমার টেবিল এর পাশের টেবিল এ সে বসলো। ২-১ মিনিট বসে আমার ব্যাগ এর দিকে তাকিয়ে রইলো।
হঠাৎ ক্লাস এ কে জানি আসলো দেখে সে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো। না এর পড়ে আর তেমন কিছু দেখা গেলো না ।
তিন জনই আবার একত্রিত হলাম। আশরাফ বলল
ঃ আমারতো মনে হচ্ছে কাজটা রাসেল ই করছে
ঃ আমার ও তো তাই মনে হচ্ছে, আজ ভালো করে সুযোগ পাইনি দেখে কাজ সারতে পারে নি।
ঃ ভুল হয়েছে এই বই আনা উচিত হইনি, বইএর সাইজ অনেক বড়, চুরি করা অনেক কষ্ট হবে- রনি বলল।
ঃ রাসেল এর বাসা আমাদেরই পাড়াই, আজ থেকে আমি লক্ষ্য রাখবো ওর উপরে। - আশরাফ বলল।
ঠিক আছে, পারলে আজই একবার ওদের বাসা থেকে ঘুরে আই যদি কিছু দেখিস। আমাদের জানাবি - রনি বলল।
ঃতুই কি ওদের বাসাই তেমন যাস ? - আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ঃ "না তেমন একটা দরকার না পড়লে আমি যাই না - আশরাফ বলল।
পরের দিন আশরাফ জানালো সে রাসেল এর বাসাই গিয়ে ছিল। কিন্তু সন্দেহজনক তেমন কোন কিছু দেখে নি।
এখন সত্যি চিন্তার বিষয় দেখা দিল। মনে করে ছিলাম, চোর ধরে ফেলেছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাজটা অনেক শক্ত।
রনি পরবর্তী একটা প্ল্যান বানালো। সে বলল, ক্লাস এর মধ্যে যারা বই প্রেমিক তাদের মোটামুটি একটা লিস্ট করে ফেলা যাক। কারণ বোঝাই যাচ্ছে যে চোর, একজন বই প্রেমিক।
এই লিস্টটা করে দেখা গেলো, আগের থেকে সন্দেহভাজনদের সংখ্যা কমে আসছে। বুঝতে পারলাম ক্লাস এ বই পড়ুয়ার সংখ্যা আসলেই কম, তার উপরে আমরা তিন জন বাদ গেলাম।
দেখা গেলো মোট সংখ্যা এসে দাঁড়ালো ৮ জনে। আশার কথা হলো তার মধ্যে রাশেদ ও আছে।
চিন্তার বিষয় হলো এই লিস্ট এখন কমাবো কিভাবে।
ঃ আমার মনে হই আমরা শুধু রাশেদ এর উপর সন্দেহ না রেখে বাকিগুলার উপরও এখন ভালো করে লক্ষ্য রাখা হোক।- রনি বলল।
এরই মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গেলো, আর তেমন কোন ঘটনাই ঘটলো না। তার অবশ্যই কারণ ও আছে ,কারণ কেউ ক্লাস এ বই আনতে সাহস পাচ্ছেনা।
আমরা তিন জনই আশা ছেড়ে দিলাম। আমাদের মিটিংগুলাও কোথাই হারাই গেলো।
কিন্তু বই আবার চুরি গেলো। আর বইটা আমারই । শিরশেন্দুর "কাকাতুয়া রহস্য " ।
বইটা আমি এনেছিলাম আমার এক পাড়ার বন্ধু থেকে। মাত্র একদিনের জন্যে চেয়ে এনেছিলাম,সময় ছিলনা তাই ক্লাস এই বইটা শেষ করতে চেয়েছিলাম।
এবং বইটা আশ্চর্যজনকভাবে চুরি গেলো, কারণ আমি ক্লাস থেকে তেমন বাইরে যাইনি । শুধু কিছুক্ষনের জন্যে ক্লাস এর সামনের বারান্দায় বেরিয়ে ছিলাম।
বইটা হারিয়ে আমার মাথা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেলো আমি সোজাসুজি রাশেদ কে গিয়ে বললাম-
ঃ বইটা কোথাই লুকিয়েছিস ?
ঃ কি...!! আমি কেন তোর বই নিবো
ঃ তুই নাতো কে নিয়েছে এই বই? তুই কি ভাবছোস কেউ কিছু বুঝবেনা ?
ঃ আমি তোর বই নেই নি ।
এর পর আমাদের মধ্যে অনেক কথা কাটাকাটি হলো...পরে বাকিরা এসে কোনোভাবে ঝগড়াটাকে সামাল দিলো।
ঃতোর এই ভাবে সরাসরি ওকে বলা উচিত হয়নি - রনি বলল।
ঃ আরে ও ই নিয়েছে, আর নাতো কে নিবে? - আমি বললাম
ঃ তুই কি দেখছিস যে বইটা ও নিয়েছে? - আশরাফ বলল
ঃ না দেখিনি তাতে কি... ও ছাড়া আর কারো উপরেই আমার সন্দেহ পড়ে না ।
বইটা হারিয়ে সেইদিন আমার সত্যি মাথাটা অনেক খারাপ হয়ে গেলো । বাসায় এসে ভাবতে থাকলাম তখন ক্লাস এ আর কে কে এসেছিলো। ক্লাস এ আমি একাই ছিলাম, মাঝে আশরাফ এসেছিলো আমার সাথে কথা বলতে, এর পরে এসেছিলো সাজ্জাদ।
কৌশিকও এসেছিলো তাও আমার সাথে কথা বলতে,বইটা চেয়েছিল আমার কাছ থেকে। সুজয়ও এসেছিলো। ও মনে পড়ল, রাসেল ও এসেছিলো প্রথমের দিকে।
রাসেল এসেছিলো মনে পরে আমার ওর উপরে আবার সন্দেহ হতে শুরু করলো। কিন্তু কালকে ওর কথা শুনে মনে হলো ও আসলেই নির্দোষ ।
আর বাকি নামগুলার মধ্যে সন্দেহজনক রইলো শুধু সাজ্জাদ। ওকে আমি ভালো করে চিনি না ।
টিফিন পিরিয়ড এ আশরাফ আর রনিকে জিজ্ঞেস করলাম সাজ্জাদ এর কথা।
ঃ ছেলেটা কেমন রে?-জিজ্ঞেস করলাম
ঃ ওর বাসা আমাদের পাড়াই, কিন্তু ছেলেটা ভালোই, কখনো সেইরকম খারাপ কিছু করতে শুনি নি। আমার সাথে অনেকদিনের পরিচয়।
ঃ তোর কি ওর উপরে সন্দেহ হচ্ছে?- রনি জিজ্ঞেস করলো
ঃ তবুও আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওর উপরে চোখ রাখা দরকার ?- আমি বললাম
ঃ ঠিক আসে, আজ থেকে চোখ রাখবো। -রনি বলল
ঃ আমিও রাখবো- আশরাফ বলল।
ক্লাস এর সবাই এখন রাসেল কে সন্দেহের চোখে দেখছে। দেখলাম সেইরকম কেও ওর সাথে ভালো করে কথা বলছে না। কাল ওকে সবার সামনে না এই ভাবে না বললেও চলতো ।
পরদিন আশরাফ আমাদের বলল-
ঃ সাজ্জাদ এর তেমন কোন সন্দেহজনক চোখে পড়ি নি। ও টিফিন পিরিয়ড এ বাসাই যায় খালি এইটাই নতুন জানলাম। বাসাতো কাছেই?
ঃ তোর বাসা ওর বাসা থেকে কাছে না?- জিজ্ঞেস করলাম।
ঃ হুম কাছেই।
ঃ তো তুই বাসাই যাস না কেন? টিফিন পিরিয়ড এ?- রনি জিজ্ঞেস করলো।
ঃআরে ধুর বাসাই যেতে ভালো লাগে না। - আশরাফ বলল।
ঃ আমার মনে হই আর ভালো করে ওর উপরে চোখ রাখা দরকার। - আমি বললাম।
এর পড়ে যে ঘটনাটা ঘটলো তাতে সত্যিই সাজ্জাদ এর উপরে আমার সন্দেহ উঠে গেলো । কারণ এবার সাজ্জাদ এর বই ই চুরি গেলো। বইটা কাকাবাবুর " মিশরের রহস্য " ।
সে ভুল করে বইটা ব্যাগ এ রেখে টিফিন পিরিয়ড এ বাসাই গিয়েছিলো আর তাতেই চোর সাবাড় করে দিলো ।
সাজ্জাদ আমার কাছে এসে বললঃ
ঃ তুই ঠিক বলেছিস, এইটা শিউর রাসেল এর কাজ। ও আমার পাশের বেঞ্চ এই বসেছিল ।
ঃ তোর পাশের বেঞ্চ এ বসলো, তবুও বই ব্যাগ এ রেখে চলে গেলি কেন?- জিজ্ঞেস করলাম ওকে
ঃ চিন্তা করি নি, ও চুরি করার আবার সাহস পাবে আবার।
ঃ হারামযাদা আসলেই। - আমি বললাম।
সেইদিন সাজ্জাদ ক্লাস ক্যাপ্টেন এর অনুমতি নিয়ে রাসেল এর ব্যাগ চেক করলো, কিন্তু কিছু পাওয়া গেলো না।
এর পরে অনেকদিন কেটে গেলো, আর তেমন কোন কিছু ঘটলো না । শুধু আশরাফ জানালো সে নাকি একবার রাসেল কে দেখেছিলো অনেক গুলা বই নিয়ে বাসাই ঢুকতে ।
কে জানে হইতো ওগুলা আমদের ই চুরি যাওয়া বই।
কদিন ধরে আশরাফ স্কুল এ আসছেনা, সে নাকি অসুস্থ শুনলাম।
বই চুরিও আর হচ্ছেনা। আমরা কয়েকজন আবার বই আনতে শুরু করলাম।
একদিন ভারত আর পাকিস্তান এর খেলা শুরু হলো। ক্লাস এর অনেকেই খেলা দেখার জন্যে স্কুল পালালো।
আমিও পালালাম। কিন্তু রনি পালালো না। তার নাকি খেলা তেমন ভালো লাগে না।
কি মনে করে সেইদিন জানি সেইদিন আর বাসায় গেলাম না, স্কুল এর কাছেই আমার আরেক বন্ধুর বাসায় খেলা দেখতে চলে গেলাম।
খেলা কেন জানি তেমন জমলোনা। তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো। ঘড়ি দেখে বুঝলাম এখন স্কুল ছুটি হয়ে যাবে।
হঠাৎ মনে পড়ল রনি আজ আমার জন্যে একটা বই এনেছিল, ওইটা নিয়া আনা হয়নি।
আবার স্কুল এর দিকে হাটা দিলাম।
স্কুল এ ঢুকলাম , দেখলাম তেমন ছাত্র নেই কারণ আজ অনেকেই খেলা দেখার জন্যে স্কুল আসে নি, যা এসেছে তার বেশির ভাগ ই পালালো।
ক্লাস রুম এ এসে দেখলাম রনির ব্যাগ পরে আছে, কিন্তু ও নেই। সম্ভবত বাথরুম এ গেলো।
আমি কেন জানি ক্লাস এ আর না ঢুকে ক্লাস এর বাম পাশের এক দেয়াল এর দিকে দাড়িয়ে ক্লাস এর ভিতর তাকিয়ে রইলাম।
হঠাৎ দেখলাম, ক্লাস এ পরিচিত একজন ঢুকল , আর আরেকজন বাইরের দিকে দাড়িয়ে আছে।
ভিতরের জন খুব দ্রুত রনির ব্যাগ খুলে একটা বই বের করে , তার ব্যাগ এ নিল।
তারপর দুজনেই তাড়াতাড়ি পালালো।
তার এক মিনিট পরে রনি ক্লাস এ আসলে আমি তার হাত ধরে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে এলাম তারপর দুজনকেই একসাথে ধরলাম।
ঃ রাসেল তোর ব্যাগ থেকে বইটা বের কর- আমি বললাম
ঃ কি? ও আমার বই নিসে- রনি বলল।
ঃ ও একা নেই নি, ওর আরেকজন সঙ্গী হলো সাজ্জাদ।
ঃ বেয়াদপ, কুত্তার বাচ্চা - এই বলে রনি সাজ্জাদ এর কলার চেপে ধরে ওকে মারধর শুরু করলো।
ঃ তুই কাকে মারতেসস- সাজ্জাদ বলে উঠলো।
ঃ তুই আমাদের মেরে কি লাভ...তুই জানোস এই চুরির মেইন নায়ক কে?- সাজ্জাদ বলতে থাকলো
ঃ কে- আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ঃ তোরা কল্পনাও করতে পারবিনা কে?- রাসেল বলল।
ঃ তোদের প্রানের বন্ধু আশরাফ- সাজ্জাদ বলল।
ঃ ও আমদের যেই ভাবে বুদ্ধি দিয়েছে আমারা সেইভাবেই কাজ করেছি। আজ এই প্ল্যান ওর ছিলনা দেখেই আমরা ধরা খেলাম।- রাসেল বলল।
ঃ তোদের এই কথাগুলার প্রমান কি?- আমি বললাম।
ঃ প্রমান...তোরা যেইদিন তিন জন মিলে প্ল্যান করে ছিলি না যে চোরের জন্যে টোপ ফেলবি,সেইদিন আশরাফই এ আমাকে বলেছিলো তোর বেঞ্চ এর পাশে একটু ঘোরা ঘুরি করে আসতে।
আর ওর প্ল্যান মতো সব সন্দেহ আমার উপরি ফেলানো হয়েছিলো ,যাতে তোরা সাজ্জাদ এর উপর ঘুণাক্ষরে সন্দেহ করতে না পারিস কারণ বেশির ভাগ চুরি ই সাজ্জাদ নিজ হাতে করতো, তারপরই টিফিন পিরিয়ড এ বাসাই রেখে আসতো । -রাসেল বলল
ঃ কিন্তু তবুও তোরা আমার উপরে সন্দেহ করলি, এই কারনে আমি দেখালাম যে আমার বই ই চুরি গেলো।কিন্তু সেইদিন আমি কোন বই ই আনিনি। - সাজ্জাদ বলল।
ঃ আর তোর বইটা চুরির সময় আশরাফ ইচ্ছা করে তোকে ক্লাস এর বাইরে এনে তোর সাথে কথা বলে তোকে ব্যস্ত রাখলো, আর ওই ফাকে আমি আর সাজ্জাদ মিলে বইটা সরাই।
ঃ আশরাফ কেন এই কাজ করলো?- আমি জিজ্ঞেস করলাম
ঃ আমি কি জানি, ওকেই জিজ্ঞেস কর। ও তোদের ভালো বন্ধু ঠিক কিন্তু ও আমদেরও ভালো বন্ধু,তোদের সাথে ওর পরিচয় মাত্র দুই বছরের,আর আমরা অনেক বছর ধরেই একই পাড়াই থাকি- রাসেল বলল।
ঃ আমরা তিন জন মিলে চেয়েছিলাম একটা লাইব্রেরি বানাতে- সাজ্জাদ বলল।
ঃ শেষ মেশ তাহলেই মিসির আলির কাছেই ধরা খেলি - রনি বলল।
রনি আমার জন্যে যে বইটা এনেছিল সেটার নাম " বাঘবন্দি মিসির আলি "
এর পরে আশরাফ যখন সুস্থ হয়ে ক্লাস এ আসলো, আমি ওর সাথে কথা বলি নি। যা বলার রনিই বলেছিল। সে রনির কাছে অনেক ক্ষমা চাইলো।
আমার চুরি যাওয়া বইগুলা ফেরত দিবে বলে কথা দিলো,কিন্তু ক্লাস এর বাকিদের কে ওদের চুরির কথাটা না বলার অনুরোধ করলো অনেক।
রনি বেশ কিছুদিন ওর সাথে কথা বলি নি, এক মাস পরে রনি আবার ওর সাথে কথা বলা শুরু করলো।
আমি ওর অনুরোধ রেখেছিলাম, কাওকে ওর চুরির কথা বলি নি। কিন্তু পুরো স্কুল জীবনে ওর সাথে আর কথা বলি নি,
কারণ আমি ওকে কখনই ক্ষমা করতে পারিনি।
লেখকঃ আইনুল চৌধুরী
Titanium Nitride coating | Stainless Steel - Tiadonic Arts
ReplyDeleteTitanium nitride coating. rocket league titanium white octane Titanium nitride coating. 1. Stainless Steel Tissue Cushions. Tissue Cushions. 1. Stainless titanium hair clipper Steel Tissue Cushions. Tissue Cushions. titanium dab tool 1. Stainless titanium exhaust tips Steel Tissue sunscreen with zinc oxide and titanium dioxide Cushions.